ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ সুন্দরবন দিবস ২০২৩ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের উপকূলজুড়ে স্থানীয় নাগরিকদের নিয়ে সুন্দরবন দিবস উদযাপন করেছে । সুন্দরবনের প্রতি মমত্ববোধ থেকে বাগেরহাট জেলার মোংলা, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া, বরগুনা জেলার তালতলী এবং কক্সবাজার জেলার সদর ও মহেশখালীতে যথাযথ উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সুন্দরবন দিবস পালন করা হয়েছে ।
১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকালে সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে মোংলা উপজেলা পরিষদ চত্বরে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সুন্দরবন একাডেমী, ব্লু প্লানেট ইনিশিয়েটিভ (বিপিআই) এবং বাদাবন সংঘ আয়োজিত র্যালীপূর্ব সমাবেশে বক্তারা বলেন, “গত একশো বছরে সুন্দরবনের আয়তন কমেছে ৪৫১ বর্গ কিলোমিটার। দখল এবং দূষণের ভারে আক্রান্ত সুন্দরবন। সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে ১৭ প্রজাতির মাছের দেহে মাইক্রো প্লাস্টিক পাওয়া গেছে। কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বনবিভাগের অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে প্রতিনিয়ত সুন্দরবনের অভয়াশ্রমে বিষ দিয়ে এবং অবৈধ ভাবে মাছ শিকার করা হচ্ছে। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন সুরক্ষায় মানুষের মুনাফালোভী বনবিনাশী কর্মকান্ড রুখতে হবে।” “বাঁচাই সুন্দরবন বাঁচাই পরিবেশ, টেকসই হোক আমাদের বাংলাদেশ” শ্লোগানে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পশুর রিভার ওয়াটারকিপার এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর মোংলার আহ্বায়ক মোঃ নূর আলম শেখ। সমাবেশে বক্তারা ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে জাতীয় ভাবে সুন্দরবন দিবস ঘোষণা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। সমাবেশের পরে সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী মোংলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। র্যালী শেষে মোংলা পৌর শহীদ মিনারে সুন্দরবন বিষয়ক শিশু চিত্রাংকন, উপস্থিত বক্তৃতা ও কুইজ প্রতিযোগিতা, লাঠিখেলা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, কলাপাড়া প্রেসক্লাব ও আমরা কলাপাড়াবাসী সংগঠনের উদ্দ্যোগে “বাঁচাই সুন্দরবন, বাঁচাই পরিবেশ, টেকসই হোক আমাদের বাংলাদেশ” এ প্রতিবাদ্য নিয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সুন্দরবন দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় কলাপাড়া প্রেসক্লাব চত্ত্বরে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে প্রেসক্লাবের প্রকৌশলী তৌহিদুর রহমান মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কলাপাড়া প্রেসক্লাব সভাপতি হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে ও পরিবেশকর্মী মেজবাহউদ্দিন মাননু’র সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক এস এম মোশারফ হোসেন মিন্টু। তিনি বলেন সুন্দরবন দিবস পালনের মাধ্যমে গোটা উপকূলের মানুষকে বিশেষ করে নতুন প্রজন্মকে পরিবেশ প্রতিবেশ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। পরিবেশকর্মী নেছারউদ্দিন আহমেদ টিপু বলেন এই দিবস পালনের উদ্যোগ আরও তৃণমূলের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, সুন্দরবন আমাদেরকে সকল প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় সবুজ দেয়াল হয়ে রক্ষা করে আসছে। তিনি সুন্দরবন ছাড়াও গোটা উপকূলের ম্যানগ্রোভ প্রজাতির বনায়ন রক্ষার দাবি করেন । সুন্দরবনসহ কলাপাড়ার সাগর উপকূলের বেড়িবাধের বাইরের প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নতুন বনাঞ্চল সৃষ্টি ও বনাঞ্চল নিধন বন্ধের দাবি জানান উপস্থিত বক্তারা।
বরগুনায় আজ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সুন্দরবন দিবস পালন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল- বাইসাইকেল র্যালি, চিত্র অংকন প্রতিযোগিতা এবং শিশু সমাবেশ। ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের উদ্যোগে সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে ‘সুন্দরবন বাঁচলে, বাংলাদেশ বাঁচবে’ শ্লোগানে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্স বরগুনা থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় সাইকেল র্যালি অনুষ্ঠিত হয় । সাইকেল র্যালিতে বরগুনা সাইকেলিং কমিউনিটির সদস্যরা ছাড়াও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও পরিবেশ কর্মীরা অংশগ্রহণ করে । র্যালিটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পায়রা নদীর পাড় দিয়ে উপকূলীয় পথ ধরে জেলে পল্লীতে গিয়ে শেষ হয় । এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে বিকালে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠিত হয়েছে । সুন্দরবন দিবসের কর্মসূচিগুলোয় পরিবেশকর্মী, উন্নয়কর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন । বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), তালতলী শাখার সমন্বয়ক আরিফুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতবিক্ষত হয়েও উপকূলীয় বাসিন্দাদের সুন্দরবন সুরক্ষা দিচ্ছে । তবে সুন্দরবন এখন নিজেই ভালো নেই। পরিবেশ দূষণসহ ম্যানগ্রোভ এ বনের জীববৈচিত্র্য এখন হুমকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির উচ্চতা বৃদ্ধিসহ চোরা-শিকারী ও কাঠ পাচারকারীদের কারণে সুন্দরবন এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে। সুন্দরবন সুরক্ষায় ও জাতীয়ভাবে ‘সুন্দরবন দিবস’ পালনে সরকারের প্রতি দাবি জানানোর মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শেষ হয় ।
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ওয়াটারকিপারর্স বাংলাদেশ এর- আয়োজনে কক্সবাজার পৌরসভা মিলনায়তনে সুন্দরবন দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের জেলা প্রতিনিধি ফজলুল কাদের চৌধুরী। উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ফরিদুল আলম শাহীন, সাধারণ সম্পাদক ও বাপা জেলা কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি এইচ এম এরশাদ, বাপা সদর শাখার সভাপতি এনামুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিম, উখিয়া বাপা সভাপতি রবিন, টেকনাফ বাপা সভাপতি নুরুল হোসাইন, চকরিয়া সভাপতি শহীদুল হক চৌধুরী, ঈদগাঁও বাপার সভাপতি রেজাউল করিমসহ বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা বাপাও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সভায় সুন্দরবন রক্ষায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তারা বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণসহ নানাবিধ পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকান্ডের মাধ্যমে আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সুন্দরবনের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। সুন্দরবন ও সেখানে বসবাসকারি বাঘসহ নানা প্রাণ বৈচিত্র্য রক্ষায় কঠোর সিদ্ধান্ত না নিলে বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবীর পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে।
কক্সবাজারের মহেশখালীতে সুন্দরবন দিবস পালন করেছে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), মহেশখালী শাখার সহ-সভাপতি আলহাজ্ব ডাঃ মোঃ এয়াকুব আলীর সভাপতিত্বে ও বাপা মহেশখালী শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মৌঃ মোঃ মহসিন এর সঞ্চালনায় ১৪ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) বিকাল ৩টায় মাতারবাড়ী কেজি এন্ড নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের হল রুমে আয়োজিত আলোচনা সভায় সুন্দরবন ও উপকূলের তাৎপর্য তুলে ধরা হয়। উক্ত সভায় আলহাজ্ব ডাঃ মোঃ এয়াকুব আলী বলেন, দেশ এবং দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে সুন্দরবন রক্ষার কোন বিকল্প নাই। এজন্য সুন্দরবনের পাশাপাশি আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করে টেকসই উন্নয়ন করতে হবে। একই সাথে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হলে সুন্দরবন সহ দেশের উপকূল রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করার আহবান জানান বক্তারা।